৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিল ইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে মোট ৮১টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, দুই ধাপে মোট ৮১টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর প্রথম ধাপে ৬৬টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চলতি বছরের ৬ নভেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইসির নিবন্ধন দেওয়া হয়।

এরপর দ্বিতীয় ধাপে যাচাই-বাছাই করে আরও ১৫টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ১৫টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধিত হলো।

নিবন্ধনপ্রাপ্ত এসব সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫ অনুসারে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।

আমাদের সময়

জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

এর আগে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিটটি দায়ের করেন।

রিট আবেদনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া কেন অবৈধ হবে না তা ব্যাখ্যা করার জন্য রুল জারি করার আবেদন করা হয়। পাশাপাশি, রুলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হোক। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

আমাদের সময়

তামিমকে অধিনায়ক করে এশিয়া কাপের দল ঘোষণা বাংলাদেশের

আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আসর। সেই আসরের জন্য বৃহস্পতিবার দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। যেখানে অধিনায়ক হিসেবে রয়েছেন আজিজুল হাকিম তামিম। সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জাওয়াদ আবরার।

দলে ইনজুরির কারণে জায়গা হয়নি পেসার আল ফাহাদের। এ ছাড়া সবশেষ সিরিজে খেলা দেবাশীষ সরকার বাদ পড়েছেন। তার পরিবর্তে এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়েছেন অফ স্পিনার শেখ পারভেজ জীবন। এ ছাড়া স্ট্যান্ডবাই হিসেবে থাকছেন চারজন।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল

আজিজুল হাকিম তামিম (অধিনায়ক), জাওয়াদ আবরার (সহ-অধিনায়ক), শেখ পারভেজ জীবন, কালাম সিদ্দিকী অলিন, রিফাত বেগ, সামিউন বশির রাতুল, রিজান হোসেন, স্বাধীন ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ফরিদ হোসেন, ইকবাল হোসেন, আল আমিন, আহমেদ শাহরিয়ার, শাদ ইসলাম, মোহাম্মদ সবুজ।

রাফিউজ্জামান, সানদীদ মজুমদার, ফারজান আহমেদ, ফারহান শাহরিয়ার, আব্দুর রহিম, দেবাশীষ সরকার।

বিডি প্রতিদিন

একটি দল ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
বক্তব্য রাখছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (ভিডিও থেকে সংগৃহীত)

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “আমরা তো কেবল ধর্মের একটা ট্যাবলেট বিক্রি করতে চাই না। আমরা চাই জনগণের কল্যাণের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি কয়েক দিন এলাকাতে ছিলাম। এই প্রথমবারের মতো নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে গেলাম। সেখানে লক্ষ্য করলাম, জনগণ আমাদের লিফলেটের বিপরীতে দেওয়া দীর্ঘ ৩১ দফা সহজভাবে বোঝার জন্য চাইছে। তাই আমরা এগুলিকে সহজভাবে সাত-আটটি মূল পয়েন্টে উপস্থাপন করেছি। নগরায়ন, আবাসন, ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা—কঠিন শব্দগুলো না বলে জনগণ যাতে সহজে বুঝতে পারে, তা আমাদের লক্ষ্য।”

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “যারা বিনা কষ্টে জান্নাতে যেতে চাচ্ছেন, তাদের আগে জানতে হবে বাসস্টেশন কোথায়। জনগণ এগুলো বুঝতে চায়। আমরা যা করছি তা হচ্ছে পরিকল্পনা। Planning is half of the job. If you don’t plan, you are planning to fail।”

তিনি যুক্ত করেন, “আমাদের ধর্মব্যবসায়ী বন্ধুদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা শুধু ধর্মের নামে ভোট চাইছে, কিন্তু ইহকালে কিভাবে চলবে, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। কিছুদিন আগে খুলনায় একটি বন্ধু যোগদান করেছে, তারা এখন একই কথা বলছে। যাদের নীতি ও পরিকল্পনা নেই, তারা ধর্মের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। জনগণ ইতোমধ্যে তাদের মুখোশ উন্মোচিত করেছে।”

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—যার ভিত্তি স্থাপন করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে পদার্পণ থেকে আজ পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন—আমাদের অহংকার। আমাদের নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস বিবেচনা করলে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বোঝা যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের জন্য কি করে।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “কিছু রাজনৈতিক দল ভোটের জন্য ধর্মের কথা বলছে। তারা মানুষের মন বিভ্রান্ত করছে। জামায়াত ধর্মের নামে ব্যবসা করছে। জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের মুখোশ চিনে ফেলেছে।”

সংবাদ সুত্র: বিডি প্রতিদিন

খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় আসছে না। জার্মানির এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ আপাতত তাদের নির্ধারিত স্লট বাতিলের আবেদন জানিয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সূত্রে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ সকালে জানিয়েছিলেন, কাতার সরকারের সহায়তায় জর্জিয়ার তিবলিসি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসার কথা ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর পর একই দিন রাত ৯টার দিকে দেশত্যাগের প্রাথমিক সময়সূচিও নির্ধারিত ছিল।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, কাতার সরকার এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করেছে। তবে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি মেডিকেল বোর্ড।

৮০ বছর বয়সী বেগম জিয়া নানা জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং পরে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সরকার তাকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণা করে এসএসএফের নিরাপত্তা দিয়েছে। এভারকেয়ারের ১২ সদস্যের মেডিকেল টিমের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও চীনের বিশেষজ্ঞরাও চিকিৎসায় যুক্ত রয়েছেন।

ইত্তেফাক

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী

০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

জি এম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; এই দুজন এখন জাতীয় পার্টির দুই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেনফাইল ছবি

প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো যখন প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে গেছে, জাতীয় পার্টি (জাপা) তখনো নিশ্চিত নয় যে তারা আদৌ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। এ প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয়, সেটিও দলটির কাছে স্পষ্ট নয়। এর সঙ্গে রয়েছে জি এম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের পরস্পরবিরোধী তৎপরতা। এসব কারণে দলটির ভবিষ্যৎ কী—সে আলোচনাও সামনে এসেছে।

গত ১৪ মাসে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের সভা-সমাবেশে পুলিশের বাধা, কার্যালয়ে হামলা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকার মতো ঘটনাগুলো এতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছে।তিন নির্বাচনের ‘দোসর’–বিতর্ক

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বা ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ হিসেবে সমালোচিত। এ দায় তারা এড়াতে পারছে না। ফলে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’, এই তকমা দলটির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ সুযোগে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন ও গণ-অধিকার পরিষদ প্রকাশ্যেই চাচ্ছে, জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়।

গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের পর একাধিকবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর রাতে সেখানে হামলা চালিয়ে আগুন দেয় কিছু ব্যক্তি

গত বছর গণ–অভ্যুত্থানের পর একাধিকবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর রাতে সেখানে হামলা চালিয়ে আগুন দেয় কিছু ব্যক্তিফাইল ছবি: প্রথম আলো

যদিও তিনটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জাতীয় পাটিকে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ বলার বিষয়ে দলটির নেতাদের ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। তাঁদের দাবি, ভোটে গিয়ে জাতীয় পার্টি কোনো অন্যায় করেনি। তাঁরা সংসদের ভেতরে–বাইরে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়-অপরাধের যথাযথ সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে জি এম কাদের ‘দোসর’ পরিচয়ের দায় নিতে শুরু থেকেই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।

এ ছাড়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে নৈতিকভাবে না যাওয়া উচিত ছিল। তবে নির্বাচনে গিয়ে আমরা আইনগতভাবে কোনো অন্যায় করিনি। এ জন্য আমাদের স্বৈরাচারের দোসর বলা হচ্ছে। আমরা যদি দোসর হই, এর বিচারটা জনগণের হাতে দেওয়াই তো ভালো।’

নির্বাচন করতে প্রস্তুত দুই পক্ষই

বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, সেটি হলো তাঁরা এখন পর্যন্ত মনে করতে পারছেন না যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে।

তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনুকূল বা প্রতিকূল যা-ই হোক, দলটির উভয় অংশই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশটি এককভাবে আর আনিসুল ইসলামের অংশটি জোটগত ভোটে বেশি আগ্রহী।

এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু সমমনা দলের সঙ্গে কথা বলছি। এটা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো কিছু হয়নি। দেখা যাক, কী হয়।’

তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জন্য যে পরিবেশ-পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ কতটা পাবে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে বেশ সংশয় আছে।

এ বিষয়ে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমাদের হয় নির্বাচন করতে হবে, না হয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরা এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করব। কারও সঙ্গে মৌখিক সমঝোতাও করতে পারি।’

জানা গেছে, পরিস্থিতি নজরে রেখে জাতীয় পার্টির দুই পক্ষই ভোটে থাকার জুতসই উপায় খুঁজছে। নেতাদের ধারণা, জোটের মাধ্যমে ভোটে গেলে তাঁদের আসন-সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তবে এসব সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা স্থিতিশীল হয়, তার ওপর।

প্রতীক নিয়ে সংকট

জাতীয় পার্টি লোগো

জাতীয় পার্টি লোগো

এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টির প্রধান সংকট হচ্ছে নেতৃত্ব ও প্রতীক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কাউন্সিলে গঠিত অপর অংশ—উভয়েই নিজেদের ‘মূল জাতীয় পার্টি’ দাবি করছে। দুই পক্ষের দূরত্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই নির্বাচন কমিশনে পাল্টাপাল্টি আবেদন পড়েছে। প্রতীক বরাদ্দ ইস্যুতে এবার আদালতেরও দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদরা। সব মিলিয়ে নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দলটির জন্য গভীর এক সংকটের তৈরি করেছে।

এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে আসেন তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদের

এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে আসেন তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদেরফাইল ছবি

অবশ্য জি এম কাদের দলের এই বিভক্তিকে কোনো সমস্যা মনে করছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আমার নামে নিবন্ধিত। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও সেটি আছে। এখন জাতীয় পার্টির নামে কেউ আবেদন করলেই প্রতীক পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দলের নেতৃত্ব নিয়ে, প্রতীক নিয়ে নানা রকম সংকট জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে প্রকট করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন দুর্বল, মাঠে তৎপরতা নেই, নেতৃত্বের বিভক্তি দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জটিল করে তুলেছে।

সরকারের উপেক্ষা

অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই জাতীয় পার্টিকে উপেক্ষা করে চলেছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে কয়েক দফা সংলাপ হয়েছে, তাতে দলটিকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। নির্বাচন কমিশনও নিবন্ধিত দল হিসেবেও তাদের ডাকেনি। দুই দশক আগে ক্ষমতার শরিক থাকলেও এখন জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ফোরামগুলো থেকে প্রায় বাদ পড়া একটি দল—এমন বাস্তবতা নেতাদের কাছেও অস্বস্তিকর। অন্যদিকে এই উপেক্ষা দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব স্পষ্ট একটি সংকেত দেয় যে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক—দুই অঙ্গনেই দলটি প্রান্তিক। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে জি এম কাদের সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তির্যক বক্তব্য দিচ্ছেন। সংবাদপত্রে কলামও লিখছেন।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব বক্তব্য স্পষ্টত হতাশা ও আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে জায়গা কমে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া। একই সঙ্গে বক্তব্যগুলো কার্যত সরকারি ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা, যাতে শেষ মুহূর্তে হলেও নির্বাচনমুখী দলে স্থান পাওয়া যায়।

ভয় কোথায়

ইতিমধ্যে সরকারপ্রধান জানিয়েছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। আওয়ামী লীগের মিত্র জোট ১৪ দলের শরিক দলগুলোও কোণঠাসা হয়ে আছে। তাদেরও রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল প্রকাশ্যেই দাবি তুলেছে, ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়।

জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার

জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারফাইল ছবি

‘ফ্যাসিবাদের দোসর’—এটাকে রাজনৈতিক গালি বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিণতি সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে যদি আবারও একটি একতরফা নির্বাচন হয় এবং তাতে যারা ক্ষমতায় আসবে, ভবিষ্যতে তাদেরও যদি পতন হয়, তখন যারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তাদেরও তো দোসর বলা হবে। সুতরাং এটা পলিটিক্যাল গালি হিসেবেই থাকবে।

রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াতসহ যেসব দল নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিরোধী, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অবর্তমানে রাজনীতিতে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, সেটি নিজেদের দখলে নেওয়া এবং নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে বসা। আওয়ামী লীগের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি যদি নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার সুযোগ পায়, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটের বড় অংশ তাদের পক্ষে যেতে পারে।

এ বিষয়ে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বিভিন্নভাবে এ সরকারের সময় নির্যাতিত, তারা আমাদের সমর্থন দেবে। আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘুদেরও সমর্থন পাব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা, প্রার্থী ঠিক করার চেষ্টা চললেও এবার বৈরী পরিস্থিতির কারণে দলের পুরোনো ও পরিচিত প্রার্থীরাও মাঠে নামতে পারছেন না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমস্যার সৃষ্টি করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন প্রার্থীরাও সাহস পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেখানে নেতৃত্ব সংকট, প্রতীক সংকট, রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সংকট, রাষ্ট্রীয় উপেক্ষা—সব মিলিয়ে দলটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পড়েছে। সুত্র: প্রথম আলো

বিএনপি চেয়ারপার্সনে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামানায় রোমে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

চাঁদপুর জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামে ইতালির উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে। সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিস্ট ব্যবসায়ি ও বিএনপি নেতা জনাব সিরাজুল ইসলাম মৃধ্যার সার্বিক তত্বাবধানে ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবির হোসেনের সভাপতিত্বে ও চাঁদপুরের কৃতি সন্তান বিএনপি নেতা আল আমিন বিশ্বাস ও রবিউল আলম এর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ইতালি বিএনপি ও তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন-

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁর শারীরিক অসুস্থতা দেশবাসীর জন্য উদ্বেগের বিষয়। তাই প্রবাস থেকেও তাঁর সুস্থতা কামনায় ঐক্যবদ্ধভাবে দোয়া করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ফোরামের নেতারা আরও উল্লেখ করেন-

প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। আজকের এই দোয়া মাহফিল সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা। বেগম জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে জাতির কল্যাণে পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরতে পারেন- এটাই সবার অভিন্ন প্রত্যাশা।

দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের ইমাম। দোয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, বাংলাদেশের শান্তি-সমৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মঙ্গল এবং জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য প্রার্থনা করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাই চাঁদপুর জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইতালিকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে আরও প্রবাসীবান্ধব সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

২০২৬-এর নির্বাচনঃ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

এম,এ হক

বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যে পটভূমি রচিত হচ্ছে, তা নাটকীয়তা ও জটিলতায় পূর্ণ। সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারী মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারণা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা হলো, তারিখের চেয়েও বেশী আলোচনা এবং সংশয় সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান জোট-নির্বাচন, পর্দার আড়ালের আলাপ-আলোচনা এবং ‘পরম্পর বোঝাপড়া’-র রাজনীতি।

২০২৬-এর নির্বাচনের রূপরেখা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত না হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোটবদ্ধতা ও ক্ষমতা ভাগাভাগির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে তৎপরতা চলছে পুরোদমে।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরীক বিভিন্ন দলকে নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বিএনপি-র একজন সিনিয়র নেতার ভাষায়, “পলিটিক্সে ডায়ালগ চলে… ইলেকশনের সময়ে গিয়ে একটা ফরমেশন হবে”।
একটি উল্লেখযোগ্য ও নতুন দিক হলো, জামায়াত ইসলামীর নেতৃত্বে আটটি ধর্মভিত্তিক দল একত্রিত হয়ে ভিন্ন একটি শক্তিশালী জোট তৈরী করেছে। এই জোটের কৌশল হলো, কোনো একটি আসনে শুধুমাত্র একজন ইসলামী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া যাতে ভোট বিভক্ত না হয়। বিগত নির্বাচনী ইতিহাসে বিএনপি-র মিত্র ছিল জামায়াত, কিন্তু ২০২৬-এ এই জোট বিএনপি-র ‘প্রধান প্রতিপক্ষ’ হিসেবেই মাঠে নামতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে গঠিত তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও অন্যান্য সমমনা দলগুলো নিয়ে তৃতীয় একটি জোট বা কৌশলগত মৈত্রী গঠনের চেষ্টা চলছে। তবে এই শক্তি নিজে সরকার গঠন করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে তাদেরই নেতা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন নিয়েও চলছে সমান্তরাল আলোচনা। বিভিন্ন দল শুধু জোটে থেকে নির্বাচন করাই নয়, বরং ভবিষ্যৎ সরকারে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেও চেষ্টা চালাচ্ছে।

সরকারের মুখপাত্র এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে। সুতরাং, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। কিন্তু নির্বাচন হবে কি না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো সেটি কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট।
বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি কী শর্তে বা কোন পথে নির্বাচনে অংশ নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রতীক বরাদ্দ নিয়ম (আরপিও) সংশোধন করা হয়েছে, যার ফলে দলগুলোকে নির্দিষ্ট প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। এর ফলে আগের মতো সহজে জোটের প্রার্থীদের একটি প্রতীকের অধীনে আনতে পারবে না। বাংলাদেশের মিত্র দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসছে। কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে কমনওয়েলথ নেতাদের প্রতি এ নির্বাচন যেন পূর্ণ গণতান্ত্রিক হয় এবং সংখ্যালঘুদের ওপর যেন আক্রমণ না হয় সে জন্য নজরদারির আহ্বানও শোনা গেছে।

বাংলাদেশের ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে মূলত তিনটি স্বতন্ত্র অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

প্রধানত সরকার ও তার মিত্রদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, নির্বাচন সঠিক সময়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে; সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখাই অগ্রাধিকার পা‌বে।

প্রধান বিরোধী দল ও কিছু পর্যবেক্ষকদের অবস্থান সংশয়পূর্ণ ও সমালোচনামূলক। তা‌দের যুক্তি, বর্তমান পরিবেশে সুষ্ঠু ও সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হওয়া কঠিন; ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। এছাড়াও ‘জাতীয় সরকার’ এর ধারণা নিয়ে আলোচনা। জোট গঠন ও কৌশলগত মৈত্রীর মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠে নামার চেষ্টা। বিরোধী জোটে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা।

নবগঠিত দল, নাগরিক সমাজ ও কিছু বিশ্লেষকের মত সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন – “নির্বাচন করাটাই কিন্তু এবার সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ নয়। নির্বাচনের পরেও এই দেশকে স্থিতিশীল রাখা… একটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।” বিএনপি বা জামায়াত-নেতৃত্বাধীন যেকোনো একটি ফ্রন্টের সঙ্গে ভবিষ্যতের ‘‌বোঝাপড়া’-র সম্ভাবনা। নতুন নির্বাচনী আইনের (আরপিও) প্রেক্ষাপটে কৌশলগত জোটের প্রয়োজনীয়তা।

২০২৬ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারীতে ভোটগ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী, কিন্তু এই নির্বাচন শুধু একটি গণতান্ত্রিক রীতির পালন হবে নাকি সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত করার মঞ্চ হবে, তা নির্ভর করবে বর্তমানে যে রাজনৈতিক নাটকের আয়োজন চলছে, তার চূড়ান্ত পরিণতির উপর।

বর্তমান আলোচনা ও ‘‌বোঝাপড়া’-র রাজনীতি ইঙ্গিত দেয় যে, ভোটের ফলাফলের চেয়ে ভোট-পূর্ব চুক্তি ও ক্ষমতা বণ্টনের হিসাব-নিকাশ এবার বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সব দল যদি অংশ না নেয়, অথবা অংশ নিলেও ভোটের মাঠ যদি সম্পূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, তার স্থায়িত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশী-বিদেশী মহলে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

চূড়ান্ত পরিণতি যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি জটিল ও নাজুক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে নির্বাচন শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে, আবার নতুন সংকটেরও সূচনা করতে পারে।

বাউল ঐতিহ্যের উপর ইসলামপন্থী‌দের হামলাঃ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংকট

এম,এ হক

বাংলাদেশে তৌহী‌দি (টাউট) জনতা নামক জঙ্গী সংগঠনসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠী বাউল সম্প্রদায়ের উপর নির্মম হামলা চালিয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ ও অন্যান্য এলাকায় বাউল গায়ক আবুল সরকারের সমর্থকদের উপর হামলায় একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে, যা দেশের সংখ্যালঘু ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। borderlens.com, oneindia.com. এরা ইসলামের নামে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার দাবী তুলে ধর্মীয় চরমপন্থাকে উস্কে দিচ্ছে। www.thejakartapost.com/

তৌহী‌দি জনতা নামক এই টাউট গোষ্ঠী বাউল অনুষ্ঠানে হামলা, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ এবং সুফী‌তের মাজার ভাঙ্গচুরের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত। www.news18.com, m.economictimes.com মাদারীপুরে আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের পর তার সমর্থকরা শহীদ মীরাজ-তাপন স্টেডিয়ামের কাছে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে হামলাকারীরা পাথর ছুড়ে তা‌দের‌কে আহত করে। borderlens.com হেফাজতে ইসলামীর মতো গোষ্ঠী স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করিয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে ‘ইসলামবিরোধী’ ঘোষণা করেছে। www.thejakartapost.com/

মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জামাত-ই-ইসলামী ও অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তাদের এসমস্ত কর্মকা‌ন্ডে উৎসাহিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। www.icpsnet.org আক্রমণের পর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দেখা যাচ্ছে, যা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।www.ndtv.com, www.news18.com বিএনপি এই হামলাকে ‘হীন কাজ’ বলে নিন্দা করলেও সরকারের নীরবতা সাংস্কৃতিক সহনশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করছে।www.ndtv.com

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউনুস সরকার চরমপন্থীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোষণ করছে, যা সমাজকে বিভক্ত করে সাংস্কৃতিক আত্মাকে ধ্বংস করবে। dailyrepublicbd.com সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খুশি কবীর এবং মানবধিকারকর্মী সারা হোসেন বলেছেন, এটি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় পরিচয়ের উপর আঘাত। borderlens.com ভবিষ্যতে এই প্রবণতা দেশকে তালেবানীয় বিকৃত সমাজ ব‌্যবস্থার রূপ দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

রোজা ও পূজা নিয়ে মন্তব্য: জামায়াতের প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা

‘রোজা এবং পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ’ মন্তব্য করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে জামায়াত নেতা ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে দলটির প্রার্থী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসএন নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলকেও এ মামলায়  আসামি করা হয়েছে।

বিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রিদওয়ান হোসেন রবিন মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর অভিযোগের বিষয়ে ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১ শতাংশ মুসলিম। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য রোজা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখা হয় এবং তার পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেন। একইভাবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের দেব-দেবীর পূজা করেন। তাই রোজাকে পূজার সঙ্গে তুলনা করা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।